| |
               

মূল পাতা রাজনীতি জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধংস করে দেয়া হচ্ছে : জিএম কাদের


বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধংস করে দেয়া হচ্ছে : জিএম কাদের


রহমত নিউজ ডেস্ক     17 September, 2023     11:07 AM    


জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, সংসদেও আমরা বলেছি, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধংস করে দেয়া হচ্ছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হচ্ছে। তখন সরকারের লোকজন অনেক কথাই বলেছে। এখন নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, নিরবে একটি দেশের গণকন্ত্র ধংস করা হচ্ছে। তাদের প্রতিদেবনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। একদলীয় শাসন কায়েম করতে সরকার কিছু আইন কানুন করেছে। কয়েকদিন আগে, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাশ করেছে। সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতাদের কণ্ঠরোধ করা হবে সাইবার সিকিউরিটি আইনে। অবস্থা এমন হবে, টেলিভিশনের নিউজ আর কেউ দেখবে না। টেলিভিশনের শুধু সরকারের ডকুমেন্টরি সম্প্রচার করা হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিক, সুশিল সমাজ এবং বিদেশী সংস্থাগুলো বারবার বলেছিলো। তাই, ডিজিটাল সিটিউরিটি আইন বাদ দিয়ে সরকার সাইবার সিকিউরিটি আইন পাশ করেছে। আমাদের সংসদ সদস্যরা এর প্রতিবাদ করেছে, সরকার আমাদের কথা শোনেনি।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাট রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক শেরীফা কাদের এমপির সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব জাহিদ হাসানের পরিচালনায় সম্মেলনেউপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ভাইস চেয়ারম্যান আদেলুর রহমান আদেল, রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইয়াসির, জেলার সদস্য সচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক‌ শাফিউল ইসলাম সাফি প্রমুখ। 

জিএম কাদের বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইন হচ্ছে নতুন বোতলে পুরনো ভেজাল ও বিষাক্ত পণ্য। শুধু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইন পাশ করে সরকার প্রতারণা করেছে। সরকার এই আইন করে জাতির সাথে তামাশা করছে। সাইবার সিকিউরিটি আইন একদলীয় শাসন চালু করতে ব্যবহার হবে। সরকারের সমালোচনা করা গণতান্ত্রিক অধিকার। দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। জনগণের ইচ্ছেমত সরকারকে দেশ পরিচালনা করতে হবে। সরকারের সমালোচনা করা জনগনের দায়িত্ব। বাক স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে। কোন কথা মনপূত না হলেই কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেছে সরকার। দেশের মালিকদের সমালোচনা করার সুযোগ দিচ্ছে না। সরাকর বিরোধী কথা বললেই রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হয়। সরকারের বিরোধীতা কখনোই রাষ্ট্রবিরোধীতা নয়। রাষ্ট্রকে অপব্যবহার  করতেই সরকার সাইবার সিকিউরিটি আইন করেছে। দেশের জনগণ প্রতিবাদ করতে পারবে না। সরকার ও রাষ্ট্র যদি এক হয়ে যায় আর জনগন যদি তা ঠেকাতে না পারে তাহলেই একদলীয় শাসন চালু হয়ে যায়। গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রে সরকারের ইচ্ছেমত রাষ্ট্রকে ব্যবহার করা যায়। জনগণের কাছ থেকে দেশের মালিকনা ছিনতাই হয়ে গেছে এই সব আইনের মাধ্যমে। এসব বিষয়ে বিদেশী গণমাধ্যমে রিপোর্ট হচ্ছে, দেশ-বিদেশে সমালোচনা হচ্ছে কিন্তু সরকার এসব থেকে পিছু হটছে না। সামনের দিকে ভয়াবহ দূর্দিন অপেক্ষা করছে। যে সব প্রতিষ্ঠান জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে সেই সব প্রতিষ্ঠান এই সরকার অকার্যকর করেছে। দেশের অর্থনীতি পর্যদূস্ত করা হয়েছে, অন্যকোন সরকার এলে দেশ চালানো কঠিন হবে। সরকার পরিবেশ ধংস করেছে, যুব সমাজের হাতে মাদক তুলে দিয়েছে। এই সরকার ইতিহাস বিকৃত করেছে। আবার আইন করা হয়েছে, কেউ ইতিহাস নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে তাকে মামলায় পড়তে হবে।

তিনি বলেন, জনগনের পক্ষে কথা বললেই বর্তমান সরকারের বিপক্ষে যায়। দেশের মানুষ প্রতিমূহুর্ত দুঃসহ যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। সিমাহীন দুর্নীতির কারনে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। মানুষের আয় কমে যাচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। দুর্নীতিতে দেশ ভেসে যাচ্ছে। এই সরকার কৃষক, শ্রমকি, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের বান্ধব নয়। এই সরকার হচ্ছে আওয়ামী লীগ বান্ধব। আওয়ামী লীগের লোক আর আওয়ামী লীগের লোক নয় এই ভাবে দেশকে বিভক্ত করেছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের লোক হয়তো শতকরা ৫ ভাগ। আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ সমর্থক কিছু লোক মিলে একটি সুবিধাভোগি গ্রæপ তৈরী করেছে। আওয়ামী লীগের লোকেরা দেশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছে। আওয়্মী লীগের লোক না হলে চাকরি ও ব্যবসা মেলে না। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষকে বঞ্চিত করে সরকার আওয়ামী লীগ বান্ধব সরকারে পরিণত হয়েছে। তাদের লোকদের কোটি কোটি টাকা বানানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। যে বৈষম্যের জন্য আমরা বৃটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি, পাকিস্তান থেকে ভাগ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের সাথে সেই বৈষম্য তৈরী করেছে। উত্তরার একটি অনুষ্ঠানে আমরা জানতে পেরেছি, শধু উত্তরায় মাসে ১৭ কোটি টাকা চাঁদাবাজী হচ্ছে। এজন্যই আওয়ামী লীগের লোকেদের টাকা রাখার জায়গা নেই। তারা বিভিন্ন উপায়ে দেশ থেকে টাকা পাঁচার করে দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশে তারা বাড়ি বানাচ্ছে। বাংলাদেশের টাকা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে। পাচারকারী দেশ হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিতি পাচ্ছে বাংলাদেশ। 

তিনি আরো বলেন, লাঙ্গলের প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসা আছে। এত ষড়যন্ত্রের পরও লাঙ্গলকে কেউ মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে নাই। ১৯৯১ সালের পর থেকে যারাই ক্ষমাতায় এসছে তারাই জাতীয় পার্টিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। জাতীয় পার্টিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারনা চলানো হচ্ছে। আমাদের দূর্বল করতে ষড়যন্তও চলছে। জাতীয় পার্টি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সামনের দিনে আরো এগিয়ে যাবে। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে নিজেদের দল মনে করে। আমরা তিনশো আসইে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা আশাবাদি, ত্রিমূখি নির্বাচন হলে উত্তরবঙ্গের সকল আসন সহ জাতীয় পার্টি অনেক আসনে জয়ী হবে। আমাদের ঐতিহ্য আছে এবং জনসমর্থন আছে। জাতীয় পার্টিকে মানুষ সুশাসন দিতে দেখেছে। উন্নয়ণের সূচণা করেছেন জাতীয় পার্টি। সেই উন্নয়ণ আমরা আবারো দেবো। আমরা জনগণের পক্ষে রাজনীতি করছি, জনগনের পক্ষে কথা বলছি। উত্তরাঞ্চল আজীবন অবহেলিত ছিলো। কারন, উত্তরাঞ্চল থেকে কোন রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর উন্নয়ণ কর্মকান্ডে দেশের মানুষ খুশি হয়েছে। রংপুর থেকে লালমনিরহাট যেতে দেড় দিন লেগে যেতো। পল্লীবন্ধু এরশাদ এর উন্নয়ণ কর্মকান্ডের জন্যই এখন রংপুর থেকে লালমনিরহাট আধাঘন্টায় পৌছা সম্ভব হয়েছে। মানুষের কষ্ট দূর করতে লালমনিরহাটকে জেলায় পরিণত করেছেন পল্লীবন্ধু এরশাদ। তাই, এখনো উত্তরবঙ্গের মানুষ জাতীয় পার্টির দিকেই তাকিয়ে আছে।